মনির হোসেন ও আবুল হোসেন, দুই ভাই পুরান ঢাকার লালবাগে সাগুন কমিউনিটি সেন্টার চালাতেন। বছর ভরে অনুষ্ঠান থাকত, ফলে ভালোই যাচ্ছিল ব্যবসা। ২০১৮ সালে ব্যাংক থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ করে লালবাগেই তাজে নবাব নামে আরও একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিনিয়োগ করেন। নতুন এ বিনিয়োগে প্রতি মাসে তাঁদের ৫ লাখ ৮ হাজার টাকা ব্যাংকের কিস্তি এবং ৫ লাখ টাকা বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু করোনার প্রভাবে বন্ধ তাঁদের কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবসা।
করোনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া কমিউনিটি সেন্টারগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে চালুর দাবি নিয়ে আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টার কনভেনশন হল অ্যান্ড ক্যাটারিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিসিএ) নেতারা। সংগঠনটি জানায়, করোনায় সারা দেশের প্রায় চার হাজার কমিউনিটি সেন্টার ও কনভেনশন হল বন্ধ পড়ে আছে। জীবিকা হারিয়েছেন এর সঙ্গে যুক্ত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ।
বিসিসিএর সভাপতি ও রাজধানীর প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টারের মালিক শাহ জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিকে থাকার চেষ্টায় আমরা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রি করে, এর–ওর থেকে ঋণ করে প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডটা টিকিয়ে রেখেছি। এখন আমরা নিঃস্ব। ব্যবসা চালু করতে না পারলে এটুকুও আর থাকছে না।’
এর আগে ৮ জুন কমিউনিটি সেন্টার খুলে দেওয়ার দাবি করে বিসিসিএ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বরাবর চিঠি পাঠান। সে চিঠির কোনো জবাব না আসায় রোববার আবার সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁরা।
বিসিসিএর সভাপতি আরও বলেন, ‘কমিউনিটি সেন্টার খোলা না থাকায় বিয়ে, গায়েহলুদ, জন্মদিনের মতো অনুষ্ঠানগুলো এখন হচ্ছে হোটেল–রেস্তোরাঁয়। সাধারণত একেকটি রেস্টুরেন্টের আকার এক থেকে দুই হাজার বর্গমিটার হয়, সেখানে কমিউনিটি সেন্টার পাঁচ থেকে তিন হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে হয়। আমরা মনে করি, হোটেল–রেস্তোরাঁয় মানুষ জমায়েত হতে পারলে কমিউনিটি সেন্টারে আরও ভালোভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব।’
বিসিসিএ জানায়, সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় সারা দেশের চার হাজার প্রতিষ্ঠানের প্রতি মাসে লোকসান হচ্ছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে ডেকোরেটরের ক্ষতির পরিমাণ আরও ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে আরও যুক্ত আছে ফটোগ্রাফি, সাজসজ্জা ও লজিস্টিকের মতো বেশ কিছু ব্যবসা। সব মিলিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয় এ খাতে। অনুষ্ঠান না হওয়ায় তাঁরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
গত মার্চে করোনার প্রকোপ বেড়ে গেলে সরকার এপ্রিলের শুরুতে সব হোটেল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে সবধরনের জনসমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা করা হয়। এতে আবার বন্ধ হয়ে যায় কমিউনিটি সেন্টার ব্যবসা।
এর আগে গত বছর করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় বন্ধ করে দেওয়া হয় সব কমিউনিটি সেন্টার। পরে চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হলে সেপ্টেম্বরে সীমিত অতিথি নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে কমিউনিটি সেন্টারগুলো খুলে দেওয়া হয়। এরপর শীতকালে সামাজিক অনুষ্ঠানের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যায়। মার্চে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয় কমিউনিটি সেন্টারগুলো। সব মিলিয়ে করোনা সংক্রমণের ১৪ মাসের মধ্যে ৯ মাসই বন্ধ কমিউনিটি সেন্টার ও কনভেনশন হলগুলো।
সংবাদ সম্মেলনে বিসিসিএর প্রচার সম্পাদক ও যশোরের শেখ হাসিনা হাইটেক পার্ক কমিউনিটি সেন্টারের মালিক সৈয়দ এনামুল করিম বলেন, ‘আমরা কোনো প্রণোদনা পাইনি, সহযোগিতাও পাইনি। আমরা সেগুলো চাচ্ছিও না। আমাদের একমাত্র দাবি, ১৭ জুন করোনার বিস্তার রোধে যে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি হবে, তাতে যেন আমাদের পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র বিভাগ থেকে সরিয়ে হোটেল–রেস্টুরেন্ট বিভাগে নিয়ে খোলার অনুমতি দেওয়া হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম কমিউনিটি সেন্টার ও কনভেনশন হল মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাহাব্বুদিন, বিসিসিএর জ্যেষ্ঠ সভাপতি হারিজ মাহমুদ এবং সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্যরা।