তবে আজ সকালের গল্প কিছুটা ভিন্ন!
ঠিক সময়েই ঘুম ভেঙেছে!
ব্রাশ করতে গিয়ে ভাঙেনি।
এমনকি রাতেই শেইভ করে ঘুমিয়েছি।

গল্পটা শুরু হয়, যখন তুহিন ভাইকে কল দিয়ে বললাম,
কোথায় আপনি? আমিতো রেডি পুরা!
ধুর ভাই, সকাল বেলা পাপে পাইসে..
মানে কি? কী হইসে ভাই?
আরে, ফাঁকা রাস্তায় গাড়ী লাগাই দিসি.
ইয়া আল্লাহ, আপনি ঠিক আছেন তো?
ঠিক আছি ভাই, আরে আপনার বাসার গলির মুখে একটা পিলার আছে না, ঐটাতে লাগাই দিসি, বুঝতে পারিনাই।
আচ্ছা, থাকেন আইতাসি আমি।
নামছি সিঁড়ি ভেঙে। আজও লিফট বন্ধ।
সময় সকাল ছয়টা পঁয়তাল্লিশ!
দ্রুত নামছি, বেচারা না জানি কোন অবস্থায় আছে।
দোতলায় পৌঁছাতেই, তাল হারিয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম।
দেয়াল ধরে কোনোমতে নিজেকে বাঁচালাম।
আবারও নামতে গিয়ে বুঝলাম, জুতা ছিঁড়েছে।
অগত্যা, আবারও সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে হচ্ছে,
ভাবছি, কেন এমন হয়? কেন?
কোনোমতে উঠে হাঁপাচ্ছি, আর বেল বাজাচ্ছি।
দরজা খুলছে না।
অথচ, মাত্রই, দরজা বন্ধ করেছিলো সুমাইয়া খানম।
ফোন দিচ্ছি, বেল বাজাচ্ছি, কোনো রেস্পন্স নাই।
ঘড়ি ধরে পাঁচ মিনিট পরে দরজা খুলে বললো,
এতবার বেল দিচ্ছো ক্যান?
শান্তিতে, একটু নিজের কাজও করতে দিবানা না কি।
বুঝিনি, বেচারি ওয়াশরুমে ছিলো।
উত্তর দেয়ার সময় নাই, জুতো খুঁজে আবার দ্রুত পায়ে নামছি।
যথারীতি গেইট বন্ধ।
দারোয়ানকে ঘুম থেকে তুললাম।
কপাল,
চাবি পাচ্ছে না।
ভাইয়া, চাবিতো এখানেই রাখসি কই গ্যালো?
ভালো করে খোঁজেন ভাই, অন্য কোথাও রাখসেন কি না।
উনি খুঁজছেন, আর আমি আল্লাহ আল্লাহ করছি।
অবশেষে পেলেন, বালিশের নীচে।
ততক্ষনে, সময় সাতটা বেজে দশ মিনিট।
বের হয়ে দৌড়াচ্ছি। ভীষণ ঠাণ্ডা আজ।
কাঁপছি আর হাঁটছি।
পাশ দিয়ে একজন যাচ্ছে, মোবাইলে লাউডস্পিকারে গান বাজছে…
পরদেশি পরদেশি যানা নাহি..
মনটা মুহূর্তেই খারাপ হয়ে গ্যালো।
বছর তিনেক আগে, তেজপাতা রেস্টুরেন্টে খাচ্ছিলাম,
আমি আর Paromita Heem.
তখনও বাজছিলো, এই গান।
গান শুনে কেঁদেকেটে বুক ভাসাচ্ছিলো পারমিতা।
আহারে, পারমিতার শোকে আচ্ছন্ন হয়ে হাঁটছি।
কিছুদূর এগোতেই, দেখি সামনে দাঁড়িয়ে Donald J. Trump.
মানে, অফিসের গাড়ীটা। ট্রাম্পের মতো চোখ মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে।
বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই, পুরাই ভাংচুর অবস্থা গাড়ীর।
দেখে মনে হচ্ছিলো ট্রাম্প দাঁড়িয়ে আছে হতাশ হয়ে।
এই অবস্থার মধ্যেই হাসি পেলো আমার।
তুহিন ভাই, অবাক চোখে তাকালেন।
বেচারা! ভাবছেন, কেন হাসছি!
উনাকে যদিও হাসির কারণ বলিনি,
এখানে বলি।
তখন, ট্রাম্প আর বাইডেনের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা ।
নির্বাচনের ফলে, এগিয়ে বাইডেন, আর ফেইসবুক স্ট্যাটাসে এগিয়ে ট্রাম্প।
এক ছোটভাই Zulkarnayen Ibney Fazlu,
নক দিয়ে বললো,
ভাই ভীষণ মন খারাপ।
কী হইসে?
এইযে ট্রাম্প হাইরা যাবে।
তাতে তোমার কী?
ভাই, ট্রাম্পের বউ কী সুন্দর। হাইরা গেলে Melania Trump ‘রে কই দেখবো বলেন।
আরে, তাইতো, খুবই যৌক্তিক।
এসব ভাবছি, আর গাড়ী ছুটছে।
তুহিন ভাইতো আমার হাসি দেইখা ক্ষেইপা আছে।
বেচারা,
বললাম, আরে আরও ভয়াবহ হতে পারতো।
আল্লাহ বাঁচাইসে, মন খারাপ করে কী করবেন?
তুহিন ভাই চুপ।
আমিও চুপ।
গাড়ী ছুটছে।
হঠাৎ ভয়াবহ শব্দে আঁতকে উঠলাম।
মুখ ভেঙচিয়ে বললেন, পড়সে।
কী পড়সে ভাই,
দেখেননা ভাই, পেছনের সিটটাও পড়ে গেসে।
বেচারা রীতিমতো কাঁদছে।
বললাম, ভাই, কিচ্ছু না। ঠিক আছে । গাড়ীতো চলছে।
এতো ভাববেন না।
আবারও চুপ তুহিন ভাই।
ঝামেলা পেরিয়ে, গাড়ী তখন অফিসের নীচে।
নামবো, বললাম, এতো মন খারাপ করবেন না।
মানুষ ভুলের ঊর্দ্ধে নয়।
এই যে দেখেন, বাংলাদেশের খেলার খবর পড়তে গিয়ে,
‘শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত
১৭০ উইকেট হারিয়ে ৬ রান
সংগ্রহ করেছে স্বাগিতকরা’
এটা পড়েও এতোটা মনখারাপ করে নাই পারমিতা হিম,
যতটা আপনি এখন করছেন।
এতো মন খারাপ করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে।
তুহিন ভাই, লজ্জা লজ্জা মুখ করে বললেন,
ভাই, মন খারাপ না, লজ্জা পাচ্ছি।
কেন?
সবাই এখন মজা নিবে।
মানে কি, কেন?
আরে ভাই, ফাঁকা রাস্তায় লাগাই দিসি তাই।
আরে তাতে কি, আরও বাজে কিছু হইতে পারতো ভাই।
নারে ভাই বুঝবেন না।
আরে বলেন বলেন,
ভাই, আমিওতো মজা নিসিলাম আগে,
যারা এমন এক্সিডেন্ট করসিলো।
এখন, তারা মজা নিবে।
শুনে আমি থ!
বললাম, ভাই , থাকেন, গেলাম আমি।
লিফটে উঠে ভাবছি, প্রকৃতি কিছুই বাকী রাখেনা।
এইযে এই স্ট্যাটাস দিয়ে মজা নিলাম।
এইটাও ফেরত দিবে।
যাই হোক, শুভ সকাল।
***বি:দ্র: তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে মানিব্যাগ নিতে ভুলে গেসি।পারমিতা কি এই যাত্রায় বাঁচাবে?