কাতার বিশ্বকাপে ফাইনালে পৌঁছানোর আগে অলিখিত ফাইনালে নিজেদের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে শক্তিশালী পোল্যান্ডের বিপক্ষে আক্রমনাত্নক ফুটবল খেলে ২-০ গোলের বীরোচিত জয় তুলে নিল আর্জেন্টিনা।সেই সাথে শিরোপা জয়ের সপ্নকে আর জোরালো করে সি গ্রুপ এর চ্যাম্পিয়ন হয়ে পাড়ি দিল বিশ্বকাপ ফুটবলের দ্বিতীয় রাউন্ডে।
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কঠিন সমীকরণের হিসাবকে মিলিয়ে দিয়ে শেষ ১৬ তে পৌঁছে গেল আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের আগে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকা আর্জেন্টাইনরা কাতার বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে এক জটিল সমীকরণের মধ্যে পড়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে বিশ্বকাপে টিকে থাকতে গ্রুপ পর্বের বাকি ম্যাচগুলো ছিল তাদের জন্য অলিখিত ফাইনালের মত। ফাইনালের মত সমান চাপ নিয়ে মাঠে নামতে হত। যেখানে জয়ের কোন বিকল্প নেই এমন সমীকরণকে মাথায় নিয়েই প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে হত।
বিশ্বকাপে তেমনই এক অলিখিত ফাইনালে কাল পোল্যান্ডের মুখোমুখি হয় মেসিবাহিনী ।গ্রুপ পর্বের এই শেষ ম্যাচে কাল বাংলাদেশ সময় রাত ১ টায় কাতারের পোর্টেবল স্টেডিয়াম ৯৭৪ অনুষ্ঠিত হয়।টান টান উত্তেজনা এই ম্যাচ নিয়ে ছিল কঠিন কিছু সমীকরনের মধ্যে ছিল আর্জেন্টিনা। জিতলে শেষ ১৬ নিশ্চিত, ড্র করলে তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে গ্রুপ পর্বের বাকি খেলার ফলাফল এর দিকে, আর হারলে সোজা বাড়ির পথ ধরতে হবে।
তবে সব সমীকরণের হিসাবকে ওলটপালট করে দিয়ে আক্রমনাত্নক ফুটবল খেলে ২-০ গোলের বেবধানে পোল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনা।আলবিসেলেস্তেদের হয়ে জয়সূচক গোল দুটি করেন অ্যালেক্সিস ম্যাক-অ্যালিস্টার ও হুলিয়ান আলভারেজ।
গতকালের গ্রুপ পর্বের এই ম্যাচে চিরচেনা রূপে ধরা দিয়েছে মেসিবাহিনি।শৈল্পিক ফুটবলের সাথে আক্রমনাত্নক ফুটবলের মিশেলে এক দৃষ্টিনন্দন ম্যাচ খেলে আর্জেন্টাইনরা।
অন্যদিকে আক্রমণ তো দূরে থাক রক্ষণ সামলাতেই ব্যস্ত ছিল পোলিশরা। তারা এতটাই অসহায় ছিল যে ম্যাচ শেষে যোগ করা ৬ মিনিটকে ধারাভাষ্যকাররা উল্লেখ করেছেন পোল্যান্ডের জন্য ৬ ঘণ্টার দুঃসহ সময় হিসেবে।
শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা।তাদের মুহু মুহু আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পোল্যান্ডের রক্ষণভাগ।ম্যাচের ৭৪ শতাংশ সময় বলের নিয়ন্ত্রণ ছিল আর্জেন্টিনার কাছে। আর্জেন্টাইনদের নেয়া ২৩টি শটের ১২টিই ছিল লক্ষ্য বরাবর। বিপরীতে পোলিশদের নেয়া ৪ শটের একটিও থাকেনি লক্ষ্যে এর দিকে। এ পরিসংখ্যানই বলে দেয় ম্যাচে কতটা আধিপত্য করেছে মেসি-ডি মারিয়ারা। আর কতটা অসহায় ছিল লেভানদোভস্কিরা।পোলিশ গোলবারে সেষ্ণি না থাকলে গোলের বন্যা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হত পোল্যান্ডের।
পোর্টেবল স্টেডিয়াম ৯৭৪ খেলা শুরু হবার পর প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবে। শুরু থেকেই পোলিশদের বেশ চাপে রাখে আর্জেন্টাইনরা।ডি বক্সের ভেতর আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে ফাউল করার কারনে খেলার ৩৮ মিনিটে ভিএআরএর সাহায্যে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি নিতে আসেন লিওনেল মেসি। কিন্তু মেসির শট দারুণভাবে ঠেকিয়ে দেন পোলিশ গোলকিপার ভয়চেক সেজনি। মজার ব্যপার হলো ম্যাচের আগে তিনি মেসির পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিরতির পর পরপরই খেলতে নেমে আক্রমনের ধার আরও বাড়িয়ে দেয় আর্জেন্টিনা। প্রথম মিনিটেই গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। পোল্যান্ডের রক্ষণের ভুলে বল পেয়ে যান নাহুয়েল মোলিনা। তার কাটব্যাক থেকে বল পেয়ে আর্জেন্টিনাকে ১-০ এগিয়ে দেন ২৩ বছর বয়সী মিডফিল্ডার অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার।খেলার ৬৭তম মিনিটে দারুণ গোলে ব্যবধান দ্বিগুন করেন জুলিয়ান আলভারেজ। এনজো ফার্নান্দেজের থেকে বল পেয়ে তিনি নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।এরপর একের পর এক আক্রমণ করেও শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা।