মুক্তিযুদ্ধের মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সুইডিশ বিচারপতি সৈয়দ আসিফ শাহকার মৃত্যুর পর বাংলাদেশে সমাধিস্থ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিজের এই ইচ্ছার কথা বেক্ত করে ৭৬৭ শব্দের এক দীর্ঘ চিঠিও লিখেছেন তিনি।
বিজয়ের এই মাসে বাংলাদেশের বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু এই সুইডিশ বিচারপতি ও কবি টেলিফোন আলাপে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা(বাসস)এর সাথে আলাপকালে তাঁর এই অন্তিম ইচ্ছার কথা জানান।
বাসস এর সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বিচারপতি সৈয়দ আসিফ বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৭২ বছঢ়।ঠিক জানি না আর কত দিন বাঁচব।কিন্তু বাংলাদেশের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আমি মৃত্যুর পর বাংলাদেশের মাটিতেই সমাধিস্থ হতে চাই। বাংলাদেশের নাগরিক না হলে যেহেতু সেখানে সমাধিস্থ হতে পারব না, তাই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি লিখেছি।“
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ইংরেজিতে লেখা ৭৬৭ শব্দের দীর্ঘ চিঠিতে সৈয়দ আসিফ বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তাঁর অপার ভালোবাসার ও গভীর মমত্ববোধের কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমি শুধু বিশ্বাস করি না, আমি নিশ্চিত যে আপনি আমার বিনীত অনুরোধটি আন্তরিকভাবে বিবেচনা করবেন।
উল্লেখ্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে সৈয়দ আসিফ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশে আসেন। রাষ্ট্রপ্রতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তাঁর হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন।
আরও পড়ুনঃ পবিত্র কাবা ঘরের ১৩৪ বছর বয়সী নিয়মিত মুসল্লির ইন্তেকাল
সৈয়দ আসিফ শাহকার পাকিস্তানের পাঞ্জাবের হরপ্পায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ২২ বছরের তরুণ। পাঞ্জাবের স্টুডেন্ট ইউনিয়নের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কাল রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে পশ্চিম পাকিস্তানের নাগরিকদের একটি অংশ প্রতিবাদী হয়ে উঠলে তিনিও তাদের সঙ্গে প্রতিবাদ, সমাবেশ, কবিতা লেখা ও লিফলেট বিতরণ করেন এই তরুণ। আর তাঁর এই প্রতিবাদের পরিণা্মস্বরূপ তিনি নিজ পরিবার, সমাজ ও দেশের মানুষের কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে ওঠেন। তাঁকে ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তিনি পাকিস্তানের কারাগারে নানারকম মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করেন তবুও বাংলাদেশের বিপক্ষে যাননি। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের পর সৈয়দ আসিফকেও বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
বন্দিদশা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি কিছুদিন লাহোরে পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রযোজক হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু নিজ দেশে বেশি দিন থাকতে পারেননি। ১৯৭৭ সালে তিনি সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে নিয়ে পাকিস্থান ত্যাগ করেন। সেখানেই তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং কাজ শুরু করেন।বর্তমানে তিনি সুইডেনে বসবাস করছেন।