প্রবল তুষারঝড় ও ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তর আমেরিকা।
প্রচণ্ড ঠান্ডা এবং প্রবল শৈত্যঝড়ে কারণে সংঘটিত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় উত্তর আমেরিকায় এখনপর্যন্ত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন বলে যানা গিয়েছে। এর মধ্যে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই এককভাবে মারা গেছেন ৩৪ জন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে,প্রবল এই শৈত্যঝড়ে সবচেয়ে বেশী ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রানহানি হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাফেলোতে। যুক্তরাষ্ট্রে নিহত ৩৪ জনের অধিকাংশই এই অঞ্চলের বাসিন্দা।শুধুমাত্র বাফেলোতেই মারা গেছেন ৭ জন। যে সাতজন মারা গেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গাড়ির ভেতর এবং তুষারআবৃত রাস্তা থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বাফেলো ছাড়াও ভেরমন্ট, ওহাইও, মিসৌরি, উইসকনসিন, কানসাস এবং কলোরাডোতেও প্রবল ঠাণ্ডা ও ঝড়ে মানুষ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে একইভাবে কানাডায়ও প্রবল তুষারপাতের কারণে সৃষ্ট দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৪ জন।কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যের মেরিট শহরের তুষারপাতের ফলে পিচ্ছিল হয়ে থাকা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে তাদের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।
গত কয়েকদিনের টানা তুষারঝড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত রোববার পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগহীন মানুষের সংখ্যা ১৭ লাখ থাকলেও তা ক্রমেই কমে আসছে। তুষারপাত আর শৈত্যঝড় বাড়তে থাকলেও ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে বিদ্যুৎের স্বাভাবিক অবস্থাকে। বিদ্যুৎহীন মানুষের সংখ্যা ১৭ লাখ থেকে কমে প্রায় ২ লাখে এসেছে।
তবে কানাডায় বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনো এই প্রচণ্ড শীতে বিদ্যুৎ সংযোগহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।দেশটির কুইবেক রাজ্যে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগহীন অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এ আশঙ্কা করা হচ্ছে।এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলেছে।জারি করা হয়েছে উইন্ড চিল সতর্কবার্তা। সাধারণত কোনো এলাকায় পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট নেমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে এ সতর্কবার্তা জারি করা হয়।
যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাপমাত্রা আরও নেমে যাওয়ার আশঙ্কায় উইন্ড চিল সতর্কবার্তা জানানো হলেও ইতিমধ্যে কানাডার ম্যানিটোবায় তাপমাত্রা মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে।
প্রবল তুষার ঝড়ের কারণে গত কয়েকদিন ধরে স্থবির হয়ে আছে উত্তর আমেরিকার জনজীবন।বিমান চলাচল এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বৈরি আবহাওয়ার জন্য শত শত ফ্লাইট বাতিলের ফলে বড়দিন উপলক্ষ্যে পরিবারের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও অনেকে তা পারেননি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হোচুল বলেছেন, ‘এবারের ঝড় বাফেলোর ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।’